ভাবসম্প্রসারণ: সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ / সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে

One Time School

ভাবসম্প্রসারণ: সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ / সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে Soth Songe Sorgobash, Osoth Songe Sorbonash – Shahriar One

ভাবসম্প্রসারণ সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে
ভাবসম্প্রসারণ সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে

আপনারা যারা শিক্ষার উপর বিভিন্ন তথ্য খুজতেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি তারা অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। এখানে শিক্ষার উপর সমসাময়িক তথ্য প্রচার করা হয়ে থাকে। আমরা প্রতিদিনই কোন না কোন বিষয়ের উপর আলোচনা করে থাকি। আজ আমরা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যাকরণ অংশের আরো একটি ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব। আজকে যে ভাব সম্প্রসারণ চিনি আলোচনা করব সেটি অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ। আজকের ভাব-সম্প্রসারণটি নিম্নে আলোচনা করা হল:

ভাবসম্প্রসারণ তালিকা

আরো এড করা হবে…..

শিক্ষাক্রমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সাবজেক্ট হলো বাংলা ব্যাকরণ। আর বাংলা ব্যাকরণেরই একটি বিশেষ টপিক হচ্ছে ভাব সম্প্রসারণ। কিন্তু দেখা যায় যে অনেকেই এই ভাব সম্প্রসারণ লিখতে পারদর্শী হয় না। আবার ভাব সম্প্রসারণ লেখে ভালো নম্বরও পায় না। তাই যারা ভাব সম্প্রসারণে অনেক ভালো নম্বর পেতে চান, আবার অনেক ভালো মাধ্যমে এই নাম্বারটা অর্জন করতে চান তাদের জন্য আজকের পোস্টটির ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে।

এখান থেকে আপনি শিখতে পারবেন কিভাবে খুবই কম সময়ের মধ্যে ভাব সম্প্রসারণ লিখে দারুন নম্বর তোলা যায়। আবার অনেকে দেখা যায় যে ভাব সম্প্রসারণ মুখস্ত করে। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ভাব সম্প্রসারণ মুখস্ত করে কিন্তু নির্ধারিত মুখস্ত বিষয়গুলোর মধ্যে যদি ভাব সম্প্রসারণ কমন না পড়ে তাহলে ঘাবড়ে যায়। অনেকেই আবার অনেকে লিখতেও পারেনা।

ভাব-সম্প্রসারণ: “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ” অথবা “সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।”

মূলভাব: মানুষ সামাজিক জীব। সঙ্গবদ্ধভাবে বাস করা মানুষের স্বভাব। সমাজে বসবাস করতে হলে সব ধরণের মানুষের সাথে চলাফেরা করতে হয়। সেখানে ভালো মানুষ যেমন আছে তেমনি খারাপ মানুষও আছে। তবে জন্মগত ভাবে মানুষ খারাপ হয় না। পরিবেশ, পরিস্থিতি, আর সঙ্গী সাথীর কারণে মানুষের চরিত্র কলঙ্কিত হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ তার চরিত্র। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “The crown and glory of life is character”। চরিত্রের গুণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ আদর্শের মর্যাদা পায়। তাই কুসঙ্গ নয়, সৎ সঙ্গের মধ্য দিয়ে নিজেকে বিকশিত করতে হবে। বাংলায় একটি প্রবাদ বাক্য প্রসিদ্ধি লাভ করেছে-“সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ”। তাই যাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা হবে তাকে আগেই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। মার্ক টোয়েনের একটি উক্তি হল-“যে কোন মানুষের ক্ষেত্রে তার বন্ধু তার জন্য সম্পদ স্বরূপ।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন-“গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধুও তেমন একটি বিশেষ জাতের মানুষ।” কিন্তু কখনো কখনো মানুষের বন্ধু তার জন্য সম্পদ না হয়ে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একজন উত্তম বন্ধু যেমন উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে, তেমনি একজন অসৎ বন্ধু ধ্বংসের চুড়ান্ত সীমায় নিয়ে যেতে পারে। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি তার চতুর্পাশের মানুষের আচার-আচরণ ও স্বভাব-চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ বিষয়ে নবী (স.) এর জবানীতে অনেক মূল্যবান উক্তি বর্ণিত হয়েছে।

ভাল লোকের সাথে চললে কিছু না কিছু উপকার হবেই। আবার খারাপ লোকের সাথে চললে কিছু না কিছু ক্ষতি হবেই। নবী (স.) এক হাদীছে এর একটি সুন্দর উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি (স.) বলেন- “সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল আতরওয়ালা এবং হাফরে ফুকদানকারীর (কামারের) মত। আতরওয়ালা হয়ত তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তুমি তার নিকট থেকে কিছু ক্রয় করবে অথবা তার নিকট থেকে তুমি এমনিতেই সুগন্ধি লাভ করবে। অপরপক্ষে কামারের ভাট্টি তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে অথবা তার থেকে তুমি দুর্গন্ধ লাভ করবে।” (সাহীহুল বুখারী, হাদীছ নম্বর-৫২১৪)।

সঙ্গদোষে মানুষ পরিবর্তিত হয়ে যায়। কুসংসর্গ চরিত্রহীনতার অন্যতম কারণ। অথচ চরিত্রের মাধ্যমেই ঘোষিত হয় জীবনের গৌরব চরিত্র দিয়ে। মানুষের যে গৌরবময় বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় তা আর কিছুতেই সম্ভব নয় বলে সবার ওপরে চরিত্রের সুমহান মর্যাদা স্বীকৃত।

বর্তমান সময়ে অসৎ সঙ্গে মিশে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের চরিত্র। হিরোইন, ইয়াবা ইত্যাকার জীবন বিনাশী মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। অসৎ নারীদের সাথে অবৈধ যৌন সংশ্রবে গিয়ে এইডস নামক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বহু শিক্ষার্থী বিপদগামী হচ্ছে। কোমলমতি একজন শিক্ষার্থী মাদকাশক্তিতে জড়িয়ে শুধু নিজের জীবন নয়, বরং একটি পরিবার এমনকি একটি মহল্লাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। নামী-দামী পরিবারের অনেক সন্তান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। কাজেই প্রতিটি অভিভাবকের উচিৎ তাদের সন্তানদের প্রতি নজর দেওয়া যে, তারা কোথায় যাচ্ছে, কখন যাচ্ছে, কখন বাড়ি ফিরছে এবং কোন ধরনের ছেলে-মেয়ের সাথে ঘুরছে।

জীবনে চলার পথে আমরা নানা ধরনের বন্ধুর মুখোমুখি হই। কিছু ভালো বা সৎ বন্ধু আর কিছু মন্দ বা অসৎ বন্ধু। অসৎ বন্ধুদের মনমানসিকতা থাকে স্বার্থকেন্দ্রিক। মুখে মিষ্টি কথা থাকলেও অন্তরে থাকে বদমতলব। তারা কখনো বন্ধুদের সুপরামর্শ দেয় না বা সঠিক পথ দেখায় না। ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ’ উক্তিটি বন্ধুত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের সৎ বন্ধুরা যেমন ভুল থেকে বাঁচিয়ে আলোর পথ দেখায়, তেমনি অসৎ বন্ধুরা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ধ্বংসের দিকে।

তাই বলা হয়, ‘সঙ্গদোষে লোহা ভাসে’। অন্যদিকে সৎ বন্ধুদের মন থাকে সাদা। তারা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে বন্ধুকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে সর্বক্ষেত্রে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্ব মজবুত হয়ে ওঠে। অনেক সময় বিপদের মুহূর্তে বন্ধু আমাদের একমাত্র সহায় হয়ে দাঁড়ায়। বন্ধু অনেক সময় রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয় থেকেও বেশি আপন হয়ে ওঠে।

মন্তব্য: উপরের আলোচনায় আমরা পরিশেষে বলতে পারি যে সঙ্গদোষে মানুষ তার চরিত্র কে হারিয়ে পশুর চেয়েও অধম হয়ে যায়। এ জগতে যত লোকের অধঃপতন হয়েছে অসৎ সংসর্গ এর অন্যতম কারণ। মানুষ সতর্ক থাকলেও কুসংসর্গে পড়ে নিজের অজ্ঞাতে পাপের পথে পরিচালিত হয়। তাই সঙ্গ নির্বাচনে আমাদের সতর্ক হতে হবে।

ভাবসম্প্রসারণ: সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ / সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে

Leave a Comment

error: Don't Copy This Content !!