ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর Jibe Prem Kore Jeijon Seijon Sebiche Ishwar
আপনারা যারা শিক্ষার উপর বিভিন্ন তথ্য খুজতেছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি তারা অবশ্যই আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। এখানে শিক্ষার উপর সমসাময়িক তথ্য প্রচার করা হয়ে থাকে। আমরা প্রতিদিনই কোন না কোন বিষয়ের উপর আলোচনা করে থাকি। আজ আমরা বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যাকরণ অংশের আরো একটি ভাব সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করব। আজকে যে ভাব সম্প্রসারণ চিনি আলোচনা করব সেটি অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ। আজকের ভাব-সম্প্রসারণটি নিম্নে আলোচনা করা হল:
ভাবসম্প্রসারণ তালিকা
- ভাবসম্প্রসারণ: শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করে শির, লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির
- ভাবসম্প্রসারণ: পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না
- ভাবসম্প্রসারণ: শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড
- ভাবসম্প্রসারণ: ভোগে সুখ নাই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ
- ভাবসম্প্রসারণ: সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ / সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে
- ভাবসম্প্রসারণ: প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না
- ভাবসম্প্রসারণ: আলস্য এক ভয়ানক ব্যাধি
আজকে আমরা বাংলা ব্যাকরণ এর যে ভাব সম্প্রসারণ আলোচনা করব সেটি সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপযোগী একটি ভাব সম্প্রসারণ। আমরা আমাদের এই ওয়েবসাইটে চেষ্টা করেছি আজকে যে ভাব সম্প্রসারণ টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি সহজ এবং সুন্দর ভাবে উপস্থাপনা করার যাতে করে শিক্ষার্থীরা সহজেই অনুবাদ করতে পারে এবং তাদের নির্দিষ্ট বাংলা ব্যাকরণ এর পাশাপাশি এই ভাব সম্প্রসারণ অনেক কাজে লাগবে।
জীবে প্রেম করে যেইজন/ সেইজন সেবিছে ঈশ্বর
মূলভাব: সৃষ্টিকে ভালোবাসার মাধ্যমে স্রষ্টাকে পাওয়া যায়। স্রষ্টা, মানুষ তথা সমগ্র জীবজগতের মধ্যেই সদা বিরাজমান। বিধাতা গভীর ভালোবাসায় এই সুবিশাল বিশ্ব সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের সকল জনপ্রাণী তার ভালবাসার সৃষ্টি। তার সৃষ্টিকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই তাকে পাওয়া যায়। জীবের প্রতি ভালবাসার পথ ধরেই স্রষ্টাকে খোঁজ করাই মানুষের সাধনা হওয়া উচিত।
সম্প্রসারিত ভাব: মহান আল্লাহ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। স্রষ্টা পৃথিবীতে যত কিছু সৃষ্টি করেছেন তার পেছনে কোন না কোন উদ্দেশ্য অবশ্যই আছে। তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ জীব হচ্ছে মানুষ। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বিশেষ কর্তব্যের জন্য। মানুষের কাজ হলো স্রষ্টার ইবাদত করা। তার জন্য সুন্দর পথ নির্দেশনা দিয়েছেন।
কিন্তু স্রষ্টাকে পাবার বা সন্তুষ্ট করার জন্য কেবল উপসনালয়ে বসে ধ্যান করলে চলে না। উপাসনা হলো স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করার পূর্বে প্রয়োজনীয় মানসিক প্রস্তুতি। তাকে সন্তুষ্ট করতে হয় কর্মের মধ্য দিয়ে, সেবার মধ্য দিয়ে। বিশ্বের যা কিছু দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান প্রকাশ করলেই প্রকারান্তরে স্রষ্টাকেই ভালোবাসা হয়।
মানুষকে সৎকর্মশীল হতে হবে। তার সকল কাজের মধ্যে মহত্ত্বের প্রেরণা থাকতে হবে। জীবনের সকল কর্মকাণ্ডকে যদি কল্যাণকর পথে পরিচালিত করা যায় তাহলে তার মাধ্যমে বিধাতার প্রাপ্য আরাধনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বস্তুত মানুষ তার চারপাশের জীবজগৎ নিয়েই জীবন যাপন করে। চারপাশের জীবনের চেয়ে চলো প্রাণে বিরাজমান তার প্রতি মানুষের কর্তব্য রয়েছে।
অনাথ, অসহায়, দুস্থ, বিপদগ্রস্ত মানুষ ঐশ্বর্যশালী মানুষের সাহায্য প্রত্যাশা করে। এসব দরিদ্র মানুষের প্রতি ধনীরা দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করুক তাই স্রষ্টার অভিপ্রেত। এসব দরিদ্র মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং মমত্ববোধ দেখানোর মধ্যে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব। শুধু আত্ম মানবকে নয় পশু পাখির মতো মুখ ও অসহায় প্রাণী কেউ ভালবাসতে হবে।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন,” জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। ” তিনি বলতে চাচ্ছেন-তুমি কোথায় ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়াচ্ছ, তোমার আশে পাশে অনেক জীব আছে তাদের সেবা করলেই ঈশ্বরকে পাওয়া যাবে। তিনি আরো বলেন-“যতক্ষণ পর্যন্ত আমার দেশের একটি কুকুরও ক্ষুধার্ত, আমার সমগ্র ধর্মকে একে খাওয়াতে হবে এবং এর সেবা করতে হবে, তা না করে অন্য যাই করা হোক না কেন তার সবই অধার্মিক।”
ইসলামী সংস্কৃতির চিত্তহারী দিকসমূহের অন্যতম হল জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শন। মানবজগতের ন্যায় প্রাণীজগতও সদয় আচরণ পাওয়ার যোগ্য এ ব্যাপারে ইসলামে যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে এবং নবী (স.) এর আচরণে যা ফুটে উঠেছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার এবং বিশ্ব মানবতাকে নাড়াদানকারী।
মানুষ শুধু মানুষের জন্যই নয় বরং মানুষ সমগ্র জীবের জন্য, ইসলাম এই সুমহান বাণীর প্রবক্তা। এক হাদীছে নবী (স.) বলেন -“যে ব্যক্তি একটি বৃক্ষ রোপন করল অথবা কোন ফসল উৎপাদন করল, আর উক্ত বৃক্ষের ফল বা ফসল কোন মানুষ বা কোন চতুষ্পদ জন্তু বা কোন হিংস্র জন্তু বা কোন পাখি ভক্ষণ করল তাহলে সে ব্যক্তির জন্য উহা সাদকাহ হিসেবে পরিগণিত হবে”। এ থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, শুধু মানুষ মানুষকে ভালবাসলে হবে না। আশেপাশের পশুপাখি, জীব জগতকেও ভালবাসতে হবে। মোটকথা স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব কে ভালোবাসলেই স্রষ্টাকে ভালোবাসা হয় কারণ সবকিছুই তাঁর সৃষ্টি।
মন্তব্য: সবশেষে আমরা বলতে পারি যে, জীবজগতের মধ্যে স্রষ্টার মহিমা প্রকাশিত। মানব সমাজের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে, তাদের সেবা করতে হবে তাহলেই স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব। জীব প্রেমীই ঈশ্বরপ্রীতির প্রকৃত পথ।
সবশেষে সকলকে ধন্যবাদ জানাই যারা শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য এই ওয়েবসাইটে খুঁজে থাকেন।