মহানবী (সাঃ) জীবনী – মাক্কী জীবন – হজ্জের মৌসুমে রাসূল (সাঃ) এর দাওয়াত

One Time School

Updated on:

হজ্জের মৌসুমে রাসূল (সাঃ)-এর দাওয়াত


যথাসময়ে হজ্জের মৌসুম এসে গেল। হজ্জের মাসের আগে-পিছে দু’মাস হল হারামের মাস। এ তিন মাস মারামারি-কাটাকাটি নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হজ্জে আগত মেহমানদের তাঁবুতে গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। ওদিকে অলীদের পরামর্শ মতে আবু লাহাবের নেতৃত্বে পরিচালিত গীবতকারী দল সবার কাছে গিয়ে রাসূল (সাঃ) সম্পর্কে বিভিন্ন অপবাদ প্রচার করতে থাকে এবং শেষে বলে আসে যে, সে একজন জাদুকর। তার কথা শুনলেই জাদুগ্রস্ত হয়ে যেতে হবে। অতএব কেউ যেন তার ধারে-কাছে না যায়। খোদ আবু লাহাব নির্লজ্জের মত রাসূল (সাঃ)-এর পিছে পিছে ঘুরতে লাগল। রাসূল (সাঃ) যেখানেই যান, সেখানেই সে গিয়ে বলেيَا أَيُّهَا النَّاسُ لاَ تُطِيعُوهُ فَإِنَّهُ صَابِىءٌ كَذَّابٌ ‘হে জনগণ! তোমরা এর কথা শুনো না। সে ধর্মত্যাগী মহা মিথ্যুক’।[সহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫৯, সনদ সহীহ; আহমাদ হা/১৬০৬৬, ১৬০৬৯] শুধু তাই নয়, সে উপরোক্ত গালি দিয়ে হজ্জ মৌসুমের বাইরে যুল-মাজায বাজারে রাসূল (সাঃ)-এর পায়ে পাথর ছুঁড়ে মেরেছিল। যাতে তাঁর দু’গোড়ালী রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল।[সহীহ ইবনু হিববান হা/৬৫৬২; হাকেম ২/৬১১; দারাকুৎনী হা/২৯৫৭, ১৮৬]
যুগে যুগে বাতিলপন্থীরা এভাবে হকপন্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে। আজও করে যাচ্ছে। যাতে লোকেরা হক কবুল করা হতে বিরত থাকে।

লাভ ও ক্ষতি :
━━━━━━━━

এই ব্যাপক অপপ্রচারের ফলে রাসূল (সাঃ)-এর জন্য লাভ ও ক্ষতি দু’টিই হল। লাভ হল এই যে, তাঁর নবুঅত দাবীর কথা সর্বত্র প্রচারিত হল। যা সুদূর ইয়াছরিবের কিতাবধারী ইহূদী-নাছারাদের কানে পৌঁছে গেল। এতে তারা বুঝে নিল যে, তাওরাত-ইনজীলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আখেরী নবীর আগমন ঘটেছে। ফলে দ্বীনদার লোকদের মধ্যে তাঁর প্রতি ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হল।
পক্ষান্তরে ক্ষতি হল এই যে, কেউ তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিল না। বরং অনেকের মধ্যে তাঁর সম্পর্কে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হল। সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক ছিল আবু লাহাবের কুৎসা রটনা ও নোংরা প্রচারণা। কেননা তিনি ছিলেন রাসূল (সাঃ)-এর আপন চাচা, নিকটতম প্রতিবেশী, তাঁর দুই মেয়ের সাবেক শ্বশুর এবং সুপরিচিত নেতা ও বড় ব্যবসায়ী। তার কথা সবাই বিশ্বাস করে নিল। যে কারণে দীর্ঘ প্রায় তিন মাসব্যাপী দিন-রাতের দাওয়াত বাহ্যতঃ নিষ্ফল হল।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ :
━━━━━━━━━━━━━

(১) ইসলাম বিশ্বধর্ম। অতএব বিশ্ব মানবতার কল্যাণে তার প্রকাশ্য দাওয়াত অপরিহার্য ছিল। ক্বিয়ামত অবধি এর প্রকাশ্য দাওয়াত অব্যাহত থাকবে। কেননা এর অকল্যাণকর কোন দিক নেই, যা গোপন রাখতে হবে। বরং যত সুন্দরভাবে ইসলামের প্রতিটি দিক জগত সমক্ষে তুলে ধরা যাবে, মানবজাতি তা থেকে তত দ্রুত কল্যাণ লাভে ধন্য হবে।

(২) কল্যাণময় কোন দাওয়াত প্রকাশিত হলে অকল্যাণের অভিসারীরা তার বিরোধিতায় উঠে পড়ে লাগবে এটাই স্বাভাবিক। রাসূল (সাঃ)-এর জীবনে সেটাই ঘটেছিল।

(৩) বাধা সত্ত্বেও দাওয়াত দানকারীকে প্রচারের সকল সুযোগ গ্রহণ করতে হবে। কেননা বহু অচেনা মানব সন্তান রয়েছে, যারা দাওয়াত পেলেই গ্রহণ করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। সেকারণ রাসূল (সাঃ) দাওয়াত প্রসারের সামান্যতম সুযোগকেও হাতছাড়া করেননি।

(৪) ইসলামের দাওয়াত হবে উদার ও বিশ্বধর্মী। এখানে রং, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল ও গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতার কোন অবকাশ থাকবে না।

(৫) তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত তথা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে সকল মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা, রাসূল (সাঃ) প্রদর্শিত পথের অনুসরণ করা এবং আখেরাতে জওয়াবদিহিতার তীব্র অনুভূতি, এই মৌলিক তিনটি বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করা ব্যতীত ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রকৃত কল্যাণ ও উন্নয়ন সম্ভব নয়। ইসলামের এই দাওয়াত সেযুগের ন্যায় এযুগেও মযলূম মানবতার মুক্তিদূত হিসাবে গ্রহণীয়।

মহানবী (সাঃ) জীবনী – মাক্কী জীবন – হজ্জের মৌসুমে রাসূল (সাঃ) এর দাওয়াত

Leave a Comment

error: Don't Copy This Content !!