প্রতিটি স্থানের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
বাংলাদেশের খুলনা জেলার একটি সাজানো-গোছানো শহর হচ্ছে নড়াইল। এক সামন্ত প্রভু বা একজন জমিদারের নামে নড়াইল এলাকার নামকরণ করা হয়েছিল। নড়াইল জেলাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। যদিও নড়াইল শহরটি পুরাতাত্ত্বিক সংস্কৃতি সম্পন্ন একটি শহর তবে বর্তমান সময়ে নড়াইল শহরটি শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং খেলাধুলা বিষয়ে উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েছে। আপনার নড়াইল ভ্রমণকে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও তথ্য সমৃদ্ধ করতে এই পোস্টে জেলাটির দর্শনীয় এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সমূহ সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
এখানে যা যা পাবেন
- নড়াইল জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো কি কি?
- অনলাইনে জমি খারিজ করার পদ্ধতি ২০২৪ । জমির নামজারি পদ্ধতি ২০২৪ | ই নামজারি আবেদন
- কিভাবে টেলিগ্রাম বট ও ইমেইল তৈরি করবেন
- কিছু সংক্ষিপ্ত শব্দের পূর্ণরূপ জানুন
- যুব উন্নয়ন ফ্রি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ২০২৪
নড়াইল বাঁধা ঘাট
নড়াইল শহর অন্যতম একটি বিখ্যাত কলেজের নাম ভিক্টোরিয়া কলেজ, যা নড়াইল জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভিক্টোরিয়া কলেজ সংলগ্ন চিত্রা নদীর তীরবর্তী ঘাটটি নড়াইল বাধাঘাট নামে পরিচিত। এই ঘাটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, ঘাটটি ভারতের অন্যতম শীর্ষ তীর্থস্থান গঙ্গা নদীর আদলে তৈরি করা হয়েছে। এই ঘাটটি নির্মাণের পেছনে কারণ হচ্ছে যে, নড়াইলে ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমিদারদের যেসকল জাহাজ চলাচল করত; সেগুলোর জন্য জাহাজঘাটা নির্মাণ করা।
অনেক স্থানীয় মানুষজন এটিকে রাজবাড়ী ঘাট নামেও চেনে। এই ঘাটের নিকটে অবস্থান হচ্ছে নড়াইল রাজবাড়ীর। সাধারণ মানুষ জন এবং দর্শনার্থীরা এই ঘাটে বিকেলের ঠান্ডা আবহাওয়া উপভোগ করতে আসেন এবং সূর্যাস্ত দেখতে আসেন। তাছাড়া এলাকার মানুষজন তাদের অবসর সময় কাটাতে বা পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে যান। ঘাটের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, ঘাটটি নির্মাণ করা হয়েছে ডোরিক স্তম্ভের উপর যা গ্রীক স্থাপত্য শৈলীর পরিচয় দেয়।
নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাড়ি
বাংলা সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসিক হচ্ছেন নীহাররঞ্জন গুপ্ত। জন্মসূত্রে তিনি ভারতের নাগরিক। ভারতে জন্মগ্রহণ করলেও তার পৈতৃক নিবাস হচ্ছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইটনা নামক গ্রামে। তার পূর্বপুরুষ ধনী সম্প্রদায়ের ছিলেন। এ কারণে তার পিতা সত্তরের দশকে দোতলা বাগানবাড়ি তৈরি করেছিলেন। সম্পূর্ণ এলাকাটি বিভিন্ন বহুবর্ষজীবী গাছ দ্বারা বেষ্টিত ছিল। ভবনের দ্বিতীয় তলায় তিনটি কক্ষ এবং নিচতলায় সাতটি কক্ষ ছিল। বাড়ির উত্তর দিকে রয়েছে একটি প্রাচীন মন্দির এবং মন্দির সংলগ্ন বারান্দা।
নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাড়িতে সৌখিনতার পরিচয় পাওয়া যায়। দরজা, জানালা, আলমারি, এবং কাঠের আসবাবপত্র কারুকাজ দিয়ে অলংকরণ করা রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের লতা- পাতার কারুকাজ ভবনটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। ভবনের সামনে রয়েছে একটি বড় পুকুর। পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকে নীহাররঞ্জন গুপ্ত তার বাড়িতে শিশুদের চিত্রাংকন ও চিত্র শিল্পের উপর শিক্ষা প্রদান করতেন। সেই সময় যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় তার কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে এবং ক্রমান্বয়ে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ২০০৩ সালে এই বাড়িটিকে বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সুলতান কমপ্লেক্স
নড়াইল জেলা সদরে মাশিমদিয়া গ্রামে বাংলাদেশের খ্যাতনামা বিশ্বমানের চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের স্মৃতি রক্ষার্থে এই সুবর্ণ কমপ্লেক্সটি তৈরি হয়েছে। সম্পূর্ণ কমপ্লেক্সের আয়তন প্রায় ২৭ একর জায়গাজুড়ে। মূল ভবন ছাড়াও বাকি স্থানগুলোতে রয়েছে সবুজের সমারোহ। ২০০৩ সালে সম্পূর্ণ নিরিবিলি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে চিত্রা নদীর তীরে এই ভবনটি নির্মিত হয়েছিল। বর্তমানে শিল্পীর দেহাবশেষ কমপ্লেক্সের এক অংশে সমাধিস্থ রয়েছে। সুলতান কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় সংরক্ষণ করা হয়েছে, তার জীবদ্দশায় ব্যবহৃত বিভিন্ন বস্তু সামগ্রী।
এখানে একটি আধুনিক ফটোগ্যালারী রয়েছে। ফটোগ্যালারীতে এস এম সুলতানের বিরল এবং বিখ্যাত চিত্র সমূহ স্থান পেয়েছে। সব মিলিয়ে মোট ২৩ টি চিত্রকর্ম এই গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছে। এস এম সুলতান একজন সর্বোচ্চ মানের বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত শিল্পী ছিলেন এবং তার চিত্র সমূহ বিশেষ তাৎপর্য বহন করত। এখানকার গ্যালারিতে যেসব বিষয়ে চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে তা হচ্ছে, গ্রামীণ পরিবেশ, ধান চাষ, সভ্যতার বিবর্তন, জমি চাষাবাদ, কৃষি কাজ, ইত্যাদি। কমপ্লেক্সের পাশে এস এম সুলতানের প্রশিক্ষণ ভবন রয়েছে যা শিশুস্বর্গ নামে পরিচিত।
বজরা নদীর কোল ঘেঁসে কমপ্লেক্স এর অংশটিতে এই ভবনটি অবস্থিত। এখানেই তিনি তাঁর মহৎ উদ্দেশ্য এগিয়ে নিয়ে যাবার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এই মহান শিল্পীর জন্মদিন ১০ আগস্ট। প্রতিবছর এই সময়ে সাত দিনব্যাপী নৌযান উৎসব নামে একটি উৎসব প্রতিপালিত হয়ে থাকে। তাছাড়াও শিল্পীর চিত্রকর্ম ও দুর্লভ স্মৃতিসমূহ দেখার জন্য দূর- দূরান্ত থেকে প্রচুর পর্যটক ও ভ্রমণকারী এখানে ভিড় জমান। কমপ্লেক্সটি সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত খোলা থাকে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য জানানো যাচ্ছে যে, প্রত্যেক রবিবার এবং সরকারী ছুটির দিনগুলোতে কম্প্লেক্সটি বন্ধ থাকে। এখানকার প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রবেশ মূল্য মাত্র ১০ টাকা।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ কমপ্লেক্স
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের বীরত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ সবচাইতে সম্মানিত খেতাব হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের ঘোষিত সাতজন বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ। তিনি ১৯৩৬ সালের ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার নূর মোহাম্মদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন যা পূর্বে মহিষখোলা গ্রাম নামে পরিচিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি বাংলাদেশের ৮ নম্বর সেক্টরের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, নূর মোহাম্মদের দেশ- প্রেম, সাহসিকতা ও যুদ্ধে অসামান্য ভূমিকা রাখার জন্য তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে সম্মানিত করা হয়।
এই মহান মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি রক্ষার্থে এবং সম্মান প্রদর্শনার্থে এই কমপ্লেক্সটি খোলা হয়। একই সাথে তার জন্মস্থানে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। এই কমপ্লেক্সের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধারণ করে রাখা এবং এই জাতীয় বীরকে স্মরণ ও সম্মান করা। এই শিক্ষামূলক পর্যটন কেন্দ্রটি সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত অন্য সকল দিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পট
বাংলাদেশের দক্ষিণ বঙ্গে অবস্থিত পিকনিক স্পটগুলোর মধ্যে সবচাইতে খ্যাতনামা ও আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পট। সুন্দর এই স্থানটি রামপুর নামক গ্রামে অবস্থিত যা নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। সমগ্র পিকনিক স্পটের আয়তন হচ্ছে প্রায় ১২ একর। তাছাড়াও এর পাশেই আরেকটি পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে যা নিরিবিলি পিকনিক স্পট নামে পরিচিত।
এই পিকনিক স্পটে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, আকর্ষণীয় রাইড, রেস্তোরাঁ, মনোরম ভাস্কর্য, প্রশস্ত উদ্যান এবং গাড়ি পার্কিংয়ের সুযোগ- সুবিধা। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত পিকনিক স্পট বলে, ছুটির সময় এবং বিকেল বেলায় অসংখ্য দর্শনার্থী এখানে ছুটে আসেন। এটি নড়াইল জেলার জিরো পয়েন্ট থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
অরুনিমা ইকো পার্ক
নড়াইল জেলা সদরের পানিপাড়া নামক গ্রামে অসম্ভব সুন্দর এই ইকোপার্কটি অবস্থিত। সমগ্র পার্কের আয়তন প্রায় ৫০ একর, তবে পার্কের সবচাইতে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এখানকার গলফ ক্লাব যা অরুনিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব হিসেবে পরিচিত। যেকোনো গলফ ক্লাবের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এসব মাঠে পরিকল্পিত বা মানব সৃষ্ট প্রকৃতি তৈরি করতে হয়। এ যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মানুষের চিন্তা ধারার এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
সব মিলিয়ে এই ইকোপার্কে ২০ টি জলাশয় রয়েছে, যার মধ্যে ১৯ টি হচ্ছে পুকুর এবং একটি লেক। গলফ ছাড়াও এখানকার ইনডোর এবং আউটডোর গেমস এর মধ্যে রয়েছে বাস্কেটবল, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, লন টেনিস, লুডু এবং দাবা। এখানকার অন্যান্য আকর্ষণ গুলোর মধ্যে রয়েছে ঘোড়াগাড়ি, নৌকা, ভ্যান এবং রিক্সা। বিভিন্ন আধুনিক ও রয়েল অনুষ্ঠানসমূহ আয়োজনের জন্য এখানে ২০০ থেকে ৭০০ জন অতিথি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন অডিটরিয়াম ও কনফারেন্স রুম রয়েছে। গলফ ক্লাবে টিকেটের মূল্য হচ্ছে ১০০ টাকা।
চিত্রা রিসোর্ট
বাংলাদেশ রিসোর্টগুলো তাদের অত্যাধুনিক ও বিস্তৃত সব সেবাসমূহ ও মানসম্মত আপ্যায়নের কারণে ইদানিং সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নড়াইলের চিত্রা নদীর তীরে এখানে প্রায় সাত বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কটেজ, পিকনিক স্পট, শিশু পার্ক, ফটোগ্যালারী, ক্যাফে ও বারবিকিউ সেন্টার। তাছাড়াও বিনোদনমূলক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বাস্কেটবল, বিলিয়ার্ড, বোর্ড রাইডিং, ইত্যাদি। প্রত্যেক দর্শকের জন্য নদী ভ্রমণের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানকার প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা এবং প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন
আপনি বাসে ও ট্রেনে নড়াইল যাত্রা করতে পারেন। আর আপনি যদি বিমান পথে যাত্রা করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনাকে ঢাকা থেকে যশোর যেতে হবে এবং যশোর থেকে বাসে বা ট্যাক্সিতে নড়াইল পৌঁছাতে হবে।
নড়াইলে আপনি যেসব উন্নত মানের আবাসন পাবেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চিত্রা রিসোর্ট, রোজ গার্ডেন রেস্ট হাউস, টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল ডিভাইন সেন্টার লিমিটেড, ইত্যাদি।
ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর উইকি পেজ তৈরি Google Knowledge Panel part 1 | One Time School