মহানবী (সাঃ) জীবনী – মাক্কী জীবন – সাহাবীগণের ইয়াছরিবে কষ্টকর হিজরত শুরু

One Time School

সাহাবীগণের ইয়াছরিবে কষ্টকর হিজরত শুরু
বায়‘আতে কুবরা সম্পন্ন হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নির্যাতিত মুসলমানদের ইয়াছরিবে হিজরতের অনুমতি দিলেন। এই হিজরত অর্থ স্রেফ দ্বীন ও প্রাণ রক্ষার্থে সর্বস্ব ছেড়ে দেশত্যাগ করা। কিন্তু এই হিজরত মোটেই সহজ ছিল না। মুশরিক নেতারা উক্ত হিজরতে চরম বাধা হয়ে দাঁড়ালো। ইতিপূর্বে তারা হাবশায় হিজরতে বাধা দিয়েছিল। এখন তারা ইয়াছরিবে হিজরতে বাধা দিতে থাকল। ইসলামের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধিতে বাধা দেওয়া ছাড়াও এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক। অর্থনৈতিক কারণ ছিল এই যে, মক্কা থেকে ইয়াছরিব হয়ে সিরিয়ায় তাদের গ্রীষ্মকালীন ব্যবসা পরিচালিত হত। আর রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল এই যে, ইয়াছরিবে মুহাজিরগণের অবস্থান সুদৃঢ় হলে এবং ইয়াছরিববাসীগণ ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিলে তা মক্কার মুশরিকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যা মক্কাবাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। যাতে তাদের জান-মাল ও ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু হুমকির মধ্যে পড়বে।
এভাবে আল্লাহ এমন এক স্থানে নির্যাতিত মুসলমানদের হিজরতের ব্যবস্থা করলেন, যা ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক দিয়ে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সব দিক বিবেচনা করে কুরায়েশ নেতারা হিজরত বন্ধ করার চেষ্টা করতে থাকেন এবং সম্ভাব্য হিজরতকারী নারী-পুরুষের উপরে যুলুম ও অত্যাচার বৃদ্ধি করে দেন। যাতে তারা ভীত হয় ও হিজরতের সংকল্প ত্যাগ করে।
বারা বিন ‘আযেব আনছারী (রাঃ) বলেন, আমাদের নিকট প্রথম হিজরত করে আসেন মুছ‘আব বিন উমায়ের, অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (অন্ধ সাহাবী)। তারা লোকদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। অতঃপর আগমন করেন বেলাল, সা‘দ বিন আবু ওয়াকক্বাছ ও ‘আম্মার বিন ইয়াসির। অতঃপর উমর ইবনুল খাত্ত্বাব আসেন বিশজন সাথী নিয়ে। অতঃপর আগমন করেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বয়ং।[1] নিম্নে হিজরতের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হল :

(১) আবু সালামাহ মাখযূমী (أَبُو سَلَمَةَ الْمَخْزُومِىُّ) :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
ইনি ছিলেন মদীনায় প্রথম হিজরতকারী সাহাবী। ইতিপূর্বে মুসলমান হয়ে সস্ত্রীক হাবশায় হিজরত করেছিলেন। তারপর সেখান থেকে ফিরে এসে বায়‘আতে কুবরার বছর খানেক পূর্বে কোলের পুত্র সন্তানসহ স্ত্রী উম্মে সালামাহকে নিয়ে হিজরত করেন। কিন্তু মক্কা থেকে রওয়ানা হওয়ার পর পথিমধ্যে আবু সালামাহর গোত্রের লোকেরা এসে তাদের বংশধর দাবী করে শিশুপুত্র সালামাহকে ছিনিয়ে নেয়। অতঃপর উম্মে সালামার পিতৃপক্ষের লোকেরা এসে তাদের মেয়েকে জোর করে তাদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। ফলে আবু সালামাহ স্ত্রী-পুত্র ছেড়ে একাকী ইয়াছরিবে হিজরত করেন। এদিকে বিচ্ছেদকাতর উম্মে সালামাহ প্রতিদিন সকালে স্বামী ও সন্তান হারানোর সেই ‘আবত্বাহ’ (الأبطح) নামক স্থানটিতে এসে কান্নাকাটি করেন ও আল্লাহর কাছে দো‘আ করেন। অতঃপর সন্ধ্যায় ফিরে যান। এভাবে প্রায় একটি বছর অতিবাহিত হয়। অবশেষে তার পরিবারের জনৈক ব্যক্তির মধ্যে দয়ার উদ্রেক হয়। তিনি সবাইকে বলে রাজি করিয়ে তাকে সন্তানসহ মদীনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আদায় করেন। অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে তিনি একাকী মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হন। মক্কার অদূরে ‘তানঈম’ নামক স্থানে পৌঁছলে কা‘বাগৃহের চাবি রক্ষক উসমান বিন ত্বালহা তার এই নিঃসঙ্গ যাত্রা দেখে ব্যথিত হন এবং তিনি স্বেচ্ছায় তার সঙ্গী হন। তাঁকে তার সন্তানসহ উটে সওয়ার করিয়ে নিজে পায়ে হেঁটে প্রায় পাঁচশত কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে যখন মদীনার উপকণ্ঠে ক্বোবায় বনু আমর বিন ‘আওফ গোত্রে পৌঁছলেন, তখন তাঁকে বললেন, তোমার স্বামী এই গোত্রে আছেন। অতএব فَادْخُلِيهَا عَلَى بَرَكَةِ اللهِ ‘আল্লাহর অনুগ্রহের উপর তুমি এই গোত্রে প্রবেশ কর’। এই বলে তাঁকে নামিয়ে দিয়ে তিনি পুনরায় মক্কার পথে ফিরে আসেন (ইবনু হিশাম ১/৪৬৯-৭০)।
উসমান বিন ত্বালহা ৭ম হিজরীর প্রথম দিকে খালেদ বিন ওয়ালীদের সাথে মদীনায় হিজরত করেন ও ইসলাম কবুল করেন। তিনি আবুবকর (রাঃ)-এর খেলাফতকালের শেষের দিকে আজনাদাইনের যুদ্ধে শহীদ হন। মক্কা বিজয়ের পর রাসূল (সাঃ) তাদের বংশেই কা‘বাগৃহের চাবি রেখে দেন এবং বলেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই চাবি তোমাদের হাতেই থাকবে। যালেম ব্যতীত কেউ এটা ছিনিয়ে নিবেনা’।[ফাৎহুল বারী হা/৪২৮৯; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬০]
উম্মে সালামাহ ও তাঁর স্বামী আবু সালামাহ প্রথম দিকের মুসলমান ছিলেন। একটি বর্ণনা মতে আবু সালামা ছিলেন একাদশতম মুসলমান। তাদের স্বামী-স্ত্রীর আক্বীদা ছিল অত্যন্ত দৃঢ়। তদুপরি আবু সালামা ছিলেন রাসূল (সাঃ)-এর দুধভাই। তাঁরা দু’জনেই শৈশবে আবু লাহাবের দাসী ছুওয়াইবাহর দুধপান করেছিলেন (বুখারী হা/৫১০১)। তিনি বদরের যুদ্ধে শরীক হন এবং ওহুদের যুদ্ধে আহত হয়ে পরে মৃত্যুবরণ করেন। তখন দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে উম্মে সালামাহ দারুণ কষ্টে নিপতিত হন। ফলে দয়া পরবশে রাসূল (সাঃ) তাকে নিজ স্ত্রীত্বে বরণ করে নেন (মুসলিম হা/৯১৮)।

(২) ছুহায়েব রূমী (صُهَيْب الرُّومِي) :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
তিনি হিজরতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে কিছু দূর যেতেই মুশরিকরা তাকে রাস্তায় ঘিরে ফেলে। তখন সওয়ারী থেকে নেমে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেখ তোমরা জানো যে, আমার তীর সাধারণতঃ লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় না। অতএব আমার তূণীরে একটা তীর বাকী থাকতেও তোমরা আমার কাছে ভিড়তে পারবে না। তীর শেষ হয়ে গেলে তলোয়ার চালাব। অতএব তোমরা যদি দুনিয়াবী স্বার্থ চাও, তবে মক্কায় রক্ষিত আমার বিপুল ধন-সম্পদের সন্ধান বলে দিচ্ছি, তোমরা সেগুলি নিয়ে নাও এবং আমার পথ ছাড়। তখন তারা পথ ছেড়ে দিল। মদীনায় পৌঁছে এই ঘটনা বর্ণনা করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে প্রশংসা করে বলেন, يَا أَبَا يَحْيَى رَبِحَ الْبَيْعُ ‘হে আবু ইয়াহইয়া! তোমার ব্যবসা লাভজনক হয়েছে’। ছুহায়েব-এর এই আত্মত্যাগের প্রশংসা করে সূরা বাক্বারাহর ২০৭ আয়াতটি নাযিল হয়। وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْرِيْ نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللهِ وَاللهُ رَؤُوْفٌ بِالْعِبَادِ ‘লোকদের মধ্যে এমনও লোক আছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন বাজি রাখে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতীব স্নেহশীল’ (বাক্বারাহ ২/২০৭)।
ছুহায়েব বিন সিনান বিন মালেক রূমী ইরাকের মূছেল নগরীতে দাজলা নদীর তীরবর্তী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পরে মক্কায় এসে আব্দুল্লাহ বিন জুদ‘আন তামীমীর সাথে চুক্তিবদ্ধ মিত্র (حَلِيف) হন। ‘আম্মার বিন ইয়াসিরের সাথে তিনি দারুল আরক্বামে এসে ইসলাম কবুল করেন এবং আল্লাহর পথে নির্যাতিত হন। পরে আলী (রাঃ)-এর সাথে মদীনায় হিজরত করেন। তিনি বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ৩৮ হিজরীতে ৭৩ বছর বয়সে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন।[2]

(৩) উমর ইবনুল খাত্ত্বাব (عُمَرُ بْنُ الْخَطَّاب) :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
বারা বিন আযেব (রাঃ) বলেন, তিনি বিশ জনকে নিয়ে হিজরত করেন (বুখারী হা/৩৯২৫)। ইবনু ইসহাক ‘হাসান’ সনদে বর্ণনা করেন যে, উমর (রাঃ) গোপনে হিজরত করেন। পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘আইয়াশ বিন আবু রাবী‘আহ এবং হেশাম বিন ‘আছ বিন ওয়ায়েল প্রত্যুষে একস্থানে হাযির হয়ে রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাফেররা হেশাম-কে বন্দী করে ফেলে। অতঃপর ‘আইয়াশ উমর (রাঃ)-এর সাথে যখন মদীনায় ‘ক্বোবা’-তে পৌঁছে গেলেন, তখন পিছে পিছে আবু জাহল ও তার ভাই হারেছ গিয়ে উপস্থিত হল এবং বলল যে, হে ‘আইয়াশ! তোমার ও আমার মা মানত করেছেন যে, যতক্ষণ তোমাকে দেখতে না পাবেন, ততক্ষণ চুল অাঁচড়াবেন না এবং রোদ ছেড়ে ছায়ায় যাবেন না’। একথা শুনে ‘আইয়াশের মধ্যে মায়ের দরদ উথলে উঠলো এবং সাথে সাথে মক্কায় ফিরে যাওয়ার মনস্থ করল। উমর (রাঃ) আবু জাহলের চালাকি অাঁচ করতে পেরে ‘আইয়াশকে নিষেধ করলেন এবং বুঝিয়ে বললেন যে, আল্লাহর কসম! তোমাকে তোমার দ্বীন থেকে সরিয়ে নেবার জন্য এরা কূট কৌশল করেছে। আল্লাহর কসম! তোমার মাকে যদি উকুনে কষ্ট দেয়, তাহলে তিনি অবশ্যই চিরুনী ব্যবহার করবেন। আর যদি রোদে কষ্ট দেয়, তাহলে অবশ্যই তিনি ছায়ায় গিয়ে আশ্রয় নিবেন। অতএব তুমি ওদের চক্রান্তের ফাঁদে পা দিয়ো না। কিন্তু ‘আইয়াশ কোন কথাই শুনলেন না। তখন উমর (রাঃ) তাকে শেষ পরামর্শ দিয়ে বললেন, আমার এই দ্রুতগামী উটনীটা নিয়ে যাও। ওদের সঙ্গে একই উটে সওয়ার হয়ো না। মক্কায় গিয়ে উটনীটাকে নিজের আয়ত্তে রাখবে এবং কোনরূপ মন্দ আশংকা করলে এতে সওয়ার হয়ে পালিয়ে আসবে। উল্লেখ্য যে, আবু জাহল, হারেছ ও ‘আইয়াশ তিনজন ছিল একই মায়ের সন্তান।
মক্কার কাছাকাছি পৌঁছে ধূর্ত আবু জাহল বলল, হে ‘আইয়াশ! আমার উটটাকে নিয়ে খুব অসুবিধায় পড়েছি। তুমি কি আমাকে তোমার উটে সওয়ার করে নিবে? ‘আইয়াশ সরল মনে রাজি হয়ে গেলেন এবং উট থামিয়ে মাটিতে নেমে পড়লেন। তখন দু’জনে একত্রে ‘আইয়াশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে দড়ি দিয়ে কষে বেঁধে ফেলল এবং ঐ অবস্থায় মক্কায় পৌঁছল। এভাবে হেশাম ও ‘আইয়াশ মক্কায় কাফেরদের একটি বন্দীশালায় আটকে পড়ে থাকলেন।
পরবর্তীতে রাসূল (সাঃ) হিজরত করে মদীনায় গিয়ে একদিন সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, مَنْ لِي بِعَيَّاشِ بْنِ أَبِي رَبِيعَةَ وَهِشَامِ ‘কে আছ যে আমার জন্য ‘আইয়াশ ও হেশামকে মুক্ত করে আনবে?’ তখন অলীদ বিন অলীদ বিন মুগীরাহ বলে উঠলেন, أَنَا لَك يَا رَسُولَ اللهِ بِهِمَا ‘ঐ দু’জনের সাহায্যে আমি প্রস্তুত আপনার জন্য হে আল্লাহর রাসূল!’ অতঃপর তিনি গোপনে মক্কায় পৌঁছে ঐ বন্দীশালায় খাবার পরিবেশনকারীণী মহিলার পশ্চাদ্ধাবন করেন এবং দেওয়াল টপকে ছাদবিহীন উক্ত যিন্দানখানার মধ্যে লাফিয়ে পড়ে তাদেরকে বাঁধনমুক্ত করে মদীনায় নিয়ে এলেন।[ইবনু হিশাম ১/৪৭৪-৭৬; ত্বাবারাণী হা/৯৯১৯]
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যোহর, বিতর ও ফজরের সালাতে রুকূ থেকে উঠে দু’হাত তুলে আল্লাহর নিকট অলীদ বিন অলীদ, সালামাহ বিন হিশাম, ‘আইয়াশ বিন আবু রাবী‘আহ-র নাম ধরে তাদের মুক্তির জন্য এবং (মক্কার) দুর্বল মুমিনদের জন্য দো‘আ করতেন’ (বুখারী হা/৭৯৭, ২৯৩২)। তিনি রামাযানে ১৫ দিন যাবৎ এ দো‘আ করেন। অলীদ বিন অলীদ ছিলেন খালেদ বিন অলীদের ভাই’ (ফাৎহুল বারী হা/৪৫৬০-এর আলোচনা)।
উপরে বর্ণিত বারা বিন ‘আযেব ও ইবনু ইসহাক-এর দু’টি বর্ণনার সমন্বয় এটাই হতে পারে যে, উমর (রাঃ)-এর ২০জন সাথী রাস্তায় পরস্পরে মিলিত হন। অতঃপর তারা প্রায় একই সময়ে মদীনায় পৌঁছে যান (মা শা-‘আ ৭১ পৃঃ)।[3]
এইভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাহাবায়ে কেরাম মক্কা হতে মদীনায় গোপনে পাড়ি জমাতে থাকেন। ফলে বায়‘আতে কুবরার পর দু’মাসের মধ্যেই প্রায় সকলে মদীনায় হিজরত করে যান। কেবল কিছু দুর্বল মুসলমান মক্কায় অবশিষ্ট থাকেন। যাদেরকে মুশরিকরা বিভিন্ন সুবিধা দেখিয়ে বা ভয় দেখিয়ে বলপূর্বক আটকে রেখেছিল।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ :
━━━━━━━━━━━━━
(১) ঈমান ও আমলের স্বাধীনতা না থাকলে নিজের সবকিছু এমনকি প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ করতে এবং যেকোন কষ্টকর মুছীবতসমূহ বরণ করতে ঈমানদারগণ রাজি হয়ে যান। ছাহাবায়ে কেরামের হিজরতের ঘটনাবলী আমাদেরকে সেই শিক্ষা দান করে।
(২) কাফেররা ঈমানদারগণের বিরুদ্ধে পিতৃধর্ম ত্যাগ ও দলভাঙ্গার অজুহাত দেখালেও তাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে ‘দুনিয়া’। দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলে বাধা মনে করেই তারা সর্বদা ইসলামী দাওয়াতকে বাধাগ্রস্ত এমনকি নির্মূল করতে চেষ্টা করে থাকে।
(৩) পেশীশক্তি দিয়ে মুমিনকে পর্যুদস্ত করা গেলেও তার ঈমানকে নির্মূল করা যায় না। বিরোধী শক্তি তাই ইসলামী আদর্শকে সর্বদা ভীতির চোখে দেখে। মক্কার মুসলমানেরা কুরায়েশ নেতাদের কোন ক্ষতি না করলেও তারা তাদের উপরে অবর্ণনীয় যুলুম করে কেবল তাদের ঈমানের ভয়ে।

[1]. বুখারী হা/৩৯২৫; ‘রাসূল (সাঃ) ও সাহাবীগণের মদীনায় আগমন’ অনুচ্ছেদ-৪৬।
[2]. ইবনু হাজার, আল-ইছাবাহ, ছুহায়েব ক্রমিক ৪১০৮; হাকেম হা/৫৭০০, ৫৭০৬; যাহাবী সহীহ বলেছেন।
[3]. এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, মদীনায় হিজরতের দিন উমর (রাঃ) তরবারিসহ কা‘বাগৃহে আসেন এবং তাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমে সালাত আদায় করেন। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, شَاهَتِ الْوُجُوهُ ‘চেহারাসমূহ ধূলি মলিন হৌক’! অতঃপর বলেন,مَنْ أَرَادَ أَنْ يُثْكِلَ أُمَّهُ أو يُوتِمَ وَلَدَهُ أَوْ تُرْمِلَ زَوْجَتَهُ فَلْيَلْقِنِيْ وَرَاءَ هَذَا الْوَادِى ‘যে ব্যক্তি তার মাকে সন্তানহারা করতে চায়, পিতা তার সন্তানকে ইয়াতীম বানাতে চায় ও স্বামী তার স্ত্রীকে বিধবা করতে চায়, সে যেন এই উপত্যকার বাইরে গিয়ে আমার সাথে সাক্ষাৎ করে’ (ইবনুল আছীর, উসদুল গা-বাহ ৪/৫৮ পৃঃ)। হযরত আলী (রাঃ)-এর সূত্রে এটি বর্ণিত হয়েছে। অথচ এটি আদৌ প্রমাণিত নয়। উমর (রাঃ) গোপনে নয়, বরং প্রকাশ্যে হিজরত করেছেন বলে তাঁর বীরত্ব প্রমাণ করতে গিয়ে এরূপ মিথ্যা কাহিনীর অবতারণা করা হয়েছে’ (আলবানী, দিফা‘ ‘আনিল হাদীছ ওয়াস-সীরাহ ৪৩ পৃঃ; সীরাহ সহীহাহ ১/২০৬; মা শা-‘আ ৭০ পৃঃ)।
বস্ত্ততঃ উমর (রাঃ) অন্যদের মতই গোপনে হিজরত করেছিলেন এবং এতে দোষের কিছু নেই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ও গোপনে হিজরত করেছিলেন। এগুলি পলায়ন নয়, বরং দ্বীনের স্বার্থে আত্মরক্ষা মাত্র।

Leave a Comment

error: Don't Copy This Content !!